ট্রান্সজেন্ডারবাদ কী
ট্রান্স মানে পরিবর্তন বা রূপান্তর, জেন্ডার মানে লিঙ্গ। ট্রান্সজেন্ডারের শাব্দিক অর্থ লিঙ্গ পরিবর্তন বা রূপান্তর। পরিভাষায় ট্রান্সজেন্ডার হলো, যারা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করেও কেবল খেয়াল-খুশির বশে বিপরীত লিঙ্গের মতো হতে চায়। অনেকে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার দাবি করে সার্জারি বা হরমোন ট্রিটমেন্ট করে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করে। তবে এই মতবাদ অনুযায়ী সার্জারি না করে শুধু মুখে নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের দাবি করলেও তাকে ট্রান্সজেন্ডার বলে ধরে নিতে হবে।
এই মতবাদ অনুসারে মানুষের আল্লাহ প্রদত্ত যৌনাঙ্গ দিয়ে লিঙ্গ নির্ধারিত হয় না। বরং লিঙ্গ একটি সামাজিক ধারণা। কোনো নারী যদি নিজেকে পুরুষ বলে মনে করে, তাহলে সে একজন পুরুষ। আবার কোনো পুরুষ যদি নিজেকে নারী বলে মনে করে, তাহলে সে মূলত একজন নারী।
হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার কি এক?
সম্প্রতি নিজেদের সুশীল দাবি করা কিছু মুক্তমনা দল ট্রান্সজেন্ডারবাদকে বৈধতা দেয়ার জন্য ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের কথা বলে তাদেরকে হিজড়াদের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। প্রকৃতপক্ষে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার কখনোই এ- নয়। হিজড়া (intersex) এক অসহায় জাতি। তারা প্রকৃতপক্ষে লিঙ্গ-প্রতিবন্ধী। যারা কোনোরূপ সার্জারি ছাড়াই এমন লিঙ্গ-প্রতিবন্ধীরূপে জন্মগ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই। হিজড়া হওয়ার বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। প্রতি ৫ হাজার জনে একজন হিজড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডারবাদ কোনো জন্মগত অসুস্থতা নয়। বরং স্বেচ্ছায় সার্জারি করে নিজের সুস্থ-সবল লিঙ্গ পরিবর্তন করে বা সার্জারি ছাড়া নিজের আইডেন্টিি চেঞ্জ করার নাম হলো ট্রান্সজেন্ডারবাদ। সুতরাং একথা পরিস্কার যে, ট্রান্সজেন্ডার আর হিজড়া এক নয়।
ইসলাম হিজড়াদের অধিকার সুরক্ষার কথা বলেছে সেই ১৪শ' বছর আগেই। ইসলাম হিজড়াদের উত্তরাধিকার সম্পতি যথাযথভাবে প্রদান করার আদেশ দিয়েছে। এই বিশ্বজগত আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী চলছে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কোনো অঙ্গ দান করেন, যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করেন।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ
তিনি সেই মহান সত্তা যিনি যেভাবে ইচ্ছা তোমাদেরকে মাতৃগর্ভে আকৃতি দান করেন (সূরা-আলে ইমরান-০৬)।
হিজড়ারাও মানুষ। অন্য প্রতিবন্ধীদের মত হিজড়াদের সাথে দয়া ও সহমর্মিতার আদেশ ইসলাম দিয়েছে। একজন মানুষ হিসেবে সবধরনের অধিকার হিজড়ারাও পেতে পারে। তাই হিজড়াদের স্বীকৃত অধিকারের বুলিকে পুঁজি করে ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি আদায় করতে চাওয়া অযৌক্তিক। এটা জঘন্য এক মতবাদকে সর্বময় ছড়িয়ে দেয়ার কূটচাল ছাড়া আর কিছু নয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে ট্রান্সজেন্ডারবাদ
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
لقد خلقنا الإنسان في أحسن تقويم
অর্থ: আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সবচেয়ে সুন্দর আকৃতিতে। (সূরা-ত্বীন, আয়াত ৪)
এই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, মানুষকে আল্লাহ তায়ালা যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন সেটাই সর্বোত্তম। সবচেয়ে সুন্দর। মাধুর্যপূর্ণ। আল্লাহপ্রদত্ত সুস্থ স্বাভাবিক আকৃতি পরিবর্তন কখনোই সুন্দর হতে পারে না। উপকারী হতে পারে না। একথা শুধু মানুষের আকৃতি ও শারীরিক গঠণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এমন নয়, বরং এই জগতে প্রতিটি জিনিসই তার ন্যাচারাল ও আল্লাহপ্রদত্ত আকৃতিতে সুন্দর। অতি সুন্দর করতে গিয়ে মানুষের হস্তক্ষেপ পতিত হলেই বস্তু তার আপন সৌন্দর্য হারায়।
অতএব ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ কখনোই মানবতার জন্য কল্যাণকর নয়। এটা আল্লাহর দেয়া নেয়ামত ও সৃষ্টিকে বিকৃত ও নষ্ট করার শামিল। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার সৃষ্ট আকৃতি বিকৃত করাকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
। কোরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন-
ولا مرنهم فليغيرن خلق الله
অর্থ (শয়তান বলছে) আমি অবশ্যই তাদেরকে (মানুষদেরকে) আদেশ করব ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করবে। (সূরা নিসা, আয়াত ১১৯)
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহর দেয়া সুস্থ সবল লিঙ্গ পরিবর্তন ও বিকৃত করা নিঃসন্দেহে একটি শয়তানি কাজ।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যাক্তি শয়তানকে বন্ধু বানায় সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। (সূরা নিসা- আয়াত: ১১৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরীরের আকৃতি পরিবর্তন ও বিকৃত করার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি ব্যক্ত করেছেন।
হাদীসে আছে
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن النهبى و المثلة
অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুটতরাজ ও প্রাণীকে বিকলাঙ্গ করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী ২৩১২)
প্রাণীকে বিকলাঙ্গ করা বলতে নাক, কান বা শরীরের কোনো অঙ্গ কেটে বিকৃত করা বুঝায়। যেখানে নাক, কান কেটে বিকলাঙ্গ করা নিষেধ সেখানে একজন সুস্থ-সবল মানুষের কেবল নিজের খেয়াল-খুশির বশে স্তন বা লিঙ্গ কেটে ফেলা কিভাবে জায়েজ হতে পারে? এমন ঘৃণ্য কাজের স্বীকৃতির দাবি কখনোই যৌক্তিক হতে পারে না।
আমার হাত, আমার পা, আমার শরীর প্রকৃতপক্ষে আমার নয়। এটা আল্লাহর পক্ষ হতে দেয়া নেয়ামত। আমার ব্যক্তিসত্তার মালিকানা মূলত আল্লাহর। আমি চাইলেই আত্মহত্যা করতে পারি না। আমার ইচ্ছা হলেই আমার কোনো অঙ্গ অযথা কর্তন করার অধিকার আমার নেই। সার্জারির মাধ্যমে লিঙ্গ কর্তন করে নারী বা পুরুষের বেশ ধারণ করার হক আমার নেই।
একথা প্রমাণিত যে, লিঙ্গ পরিবর্তন করার মাধ্যমে একজন সুস্থ সবল পুরুষ কখনোই পরিপূর্ণ নারী হতে পারে না। এমন ট্রান্স নারী সন্তান জন্ম দিতে পারে না। তার মাসিক ঋতুস্রাব হয় না। নারীসুলভ সামাজিক অনেক কাজই সে করতে পারে না। একই কথা নারী থেকে পুরুষ হতে চাওয়া ব্যাক্তিটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এতে নারীর সাথে পুরুষের এবং পুরুষের সাথে নারীর সাদৃশ্যই কেবল অর্জিত হয়। বাস্তবে নারী কখনো পুরুষ হতে পারে না। পুরুষও কখনো নারী হতে পারে না।
হাদীসে নারী-পুরুষের পরস্পর সাদৃশ্য অবলম্বনকে কঠোরভাবে নিষেধ ও অভিসম্পাত করা হয়েছে।
হাদীসে আছে -
لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المتشبهين من الرجال بالنساء و المتشبهات
من النساء بالرجال
অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষ এবং পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারীদের উপর। (সহীহ বুখারী- ৫৮৮৫)
হাদীসে আরো আছে -
لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم الرجل يلبس لبسة المرأة و المرأة تلبس لبسة
الرجل
অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পুরুষের উপর লানত করেছেন যে নারীর ন্যায় পোশাক পরে এবং লা নত করেছেন ঐ নারীর উপর যে পুরুষের ন্যায় পোশাক পরে। (আহমদ ৮৩০৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরোক্ত দু'টি বাণী লক্ষ্য করলে দেখা যায়, নারী-পুরুষের বাহ্যিক সাদৃশ্যও হারাম এবং নিষিদ্ধ। তাহলে পুরোদস্তুর একটা অঙ্গহানি করে নারী পুরুষ হতে চেষ্টা করা এবং পুরুষ নারী হতে চেষ্টা করা কতটা ভয়াবহ ও জঘন্য, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এমন ঘৃণ্য কাজ দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় এবং অধঃপতন ছাড়া আর কিছু নয়। ট্রান্স মতবাদ শুধু কেবল দেশ ও জাতির জন্যই ভয়াবহ নয় বরং এটি কোরআন ও হাদীসের সাথে সরাসরি বিদ্রোহের শামিল।
ট্রান্সজেন্ডারবাদ ব্যাক্তি জীবনে আনে ভয়াবহ মানসিক বিপর্যয়
ট্রান্সজেন্ডাররা নিজেদেরকে শারীরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ দাবি করলেও তারা মারাত্মক মানসিক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। গবেষনায় দেখা যায় যে, সাধারণ মানুষের তুলনায় ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে আত্মহত্যার আশংকা ২২ গুণ বেশি। (সূত্র - কালবেলা: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩)
বৃটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এক জরিপে প্রকাশ করে, আমেরিকার ৫০% এরও বেশি ট্রান্সজেন্ডার নারী-পুরুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। (গার্ডিয়ান: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২)
ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের শুধু আত্মহত্যার ঝুঁকিই নয় বরং তারা স্বাস্থ্যগতভাবেও হয় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। একটা সুস্থ- সবল দেহে অস্ত্রোপচার করার ফলে তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পতিত হয়।
ডা. মারসি বোয়ার্স সিবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায় স্বাস্থ্যগতভাবে খুবই আশংকাজনক। যাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা একান্ত জরুরি।
European journal of Endocrinology নামক বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত তথ্যানুসারে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের মধ্যে ৯৫% এর বেশি নারীর হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। এছাড়া তাদের প্রবল ডায়বেটিসেরও সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রান্সজেন্ডারদের এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ২৬ থেকে ৩০ গুণ বেশি। তাছাড়া তাদের মাঝে মাদকাসক্তি নিজে নিজের ক্ষতি করা (self-harm), ডিপ্রেশন ও উদ্বিগ্নতার প্রবণতা বেশি থাকে।
লিঙ্গ প্রতিস্থাপন ও নিজের জেন্ডার আইডেন্টিটি চেঞ্জ করা যেকোনো মানুষের ব্যাক্তি জীবনে এক বড় সিদ্ধান্ত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাবই ব্যাক্তি জীবনে পড়ে। চারপাশের সামাজিক ও মানসিক চাপ এবং আল্লাহর চিরাচরিত নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান একজন ট্রান্স নারী-পুরুষের জীবনকে চরম দুর্বিষহ করে তোলে।
এমনই একজন হলেন ক্রিস বেক। যিনি প্রথম প্রকাশ্য ট্রান্সজেন্ডার। তিনি জানান, লিঙ্গ পরিবর্তন ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি বলেন, গত দশ বছরে আমার সাথে যা ঘটেছে তা আমার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। আমি নিজেই আমার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছি। (নিউইয়র্ক পোস্ট- ২০২২, ডিসেম্বর-১১)
ট্রান্সজেন্ডারবাদ সামাজিকীকরন সৃষ্টি করবে মারাত্মক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি
ট্রান্সজেন্ডারবাদ রাস্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। নষ্ট হবে ব্যাক্তিগত প্রাইভেসি। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে বিশৃঙ্খলা। নারীর অবয়বে পুরুষ ঢুকে পড়বে নারীর অন্দর মহলে। গাড়ীতে, পার্কে সবত্র নারীরা নির্যাতিত হবে। ইজ্জত-সম্মান হারাবে নারীরূপী এসব ট্রান্সদের কাছে। কলেজ-ইউনিভার্সিটি ও হসপিটালের মতো জায়গাগুলোতে নারীর একান্ত নামাজের জায়গা ও ওয়াশরুম হবে তামাশার পাত্র। যে কেউ নারীর বেশে এসব স্থানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। এর নজির বিশ্বব্যাপি অহরহ। বিপত্তি তৈরি হবে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে। একজন নারী জেন্ডার আইডেন্টিটি পরিবর্তন করে পুরুষের সমান অংশ দাবি করবে। বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে নারীদের চাকরির ক্ষেত্রেও। একজন পুরুষ জেন্ডার আইডেন্টিটি পরিবর্তন করে নারী কোটায় সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে অনায়াসে। জেলখানা, হোস্টেল এবং টয়লেটগুলোতে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি ছড়িয়ে পড়বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ব্রিটেন মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী- জেলখানার ১৭৬ জন ট্রান্সজেন্ডার নারীর (জন্মগত পুরুষ) ৭৬ জন যৌন নির্যাতনমূলক অপরাধে জড়িত। (সূত্র- কালবেলা ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩)
বিবিসি নিউজে দেখা যায়, একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী (জন্মগত পুরুষ) একটি শিশুকে ধর্ষণের অপরাধে জেলখানায় যায়। পরে ছাড়া পেয়ে সে আবার একজন নারীকে ধর্ষণ করে। (বিবিসি নিউজ, ইংল্যান্ড, ১০ মে-২০২৩)
পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্ষক ট্রান্সজেন্ডার না অবশ্যই। তবে ট্রান্সদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ চোখে পড়ার মতো। সংবাদমাধ্যমগুলোতে এমন ধর্ষনের ঘটনা কম নয়। সেটা বিপরীত লিঙ্গের সাথে নয় বরং ট্রান্সজেন্ডার নারী কর্তৃক অপর নারীকে ধর্ষণের ঘটনাই বেশি। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শুধু মুখে মুখে দাবি করলেই জেন্ডার আইডেন্টিটি পরিবর্তন হয় না। কপালে টিপ আর শাড়ি, গহনা, আলতা পরলেই নারী হওয়া যায় না। এমনকি অস্ত্রোপচার করে জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করলেও নয়। একই কথা নারী থেকে পুরুষ ট্রান্সজেন্ডারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদকে "না" বলা সময়ের অপরিহার্য দাবি।
ট্রান্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত
ট্রান্সজেন্ডারবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষকদের অনেক অভিমত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ইলন মাস্কের মতো ব্যাক্তিরাও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন। এই জঘন্য মতবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইলন মাস্ক সম্প্রতি what is a women নামে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি শেয়ার করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ১৭০ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখেছে। (কালবেলা- ডিসেম্বর-৭, ২০২৩)
মিডিয়ায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায় যে, ইলন মাস্কের ছেলে জাভিয়ার লিঙ্গ পরিবর্তন করে জেনা নাম ধারণ করে মেয়ে হয়। ইলন মাস্ক এতে চরম ক্ষুব্ধ হন। এর জন্য ছেলের স্কুলকেও দায়ী করেন তিনি। (ইনকিলাব - সেপ্টেম্বর-৪, ২০২৩)
সম্প্রতি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে মন্তব্য করে বলেন- 'কেউ চাইলেই লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে না, পুরুষ পুরুষই, নারী নারীই'। স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ অন্তর্ভূক্তির প্রতিবাদে গত ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার লক্ষ লক্ষ (মিলিয়ন মার্চ) পিতামাতা রাস্তায় নেমে আসেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নির্বাচনে জয়লাভ করার পর বলেন, এই বিজয় এলজিবিটি মতাদর্শের বিরুদ্ধে বিজয়। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রান্সজেন্ডার একটি বড় ইস্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ সমস্ত প্রতিবেদন থেকে বুঝা যায়, ট্রান্সজেন্ডারবাদ বিশ্বব্যাপী কতটা গুরত্বপূর্ন ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। সর্ব মহলে কতটা গুরত্বের সাথে স্থান পাচ্ছে। এই মতবাদ সময়মত প্রতিহত করা না গেলে পুরো পৃথিবী নরকে পরিণত হবে। মানুষের স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়া প্রবলভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি হবে ঈমান বিধ্বংসী
বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদ ও তাদের অধিকার নিয়ে একটি মহল দৌড়ঝাঁপ করছে। শুধু এতটুকুতেই শেষ নয়। পাঠ্যপুস্তকেও ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ ঢুকে পড়েছে। শরীফার গল্প নামে সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও ভূগোলের অনুশীলন বইয়ের ৫১-৫৬ পৃষ্ঠায় সরাসরি ট্রান্সজেন্ডারবাদের দীক্ষা দেয়া হয়েছে। হো চি মিন ইসলাম নামে এক ট্রান্সজেন্ডার নারী তো ট্রান্সদের অধিকার বিষয়ে কথা বলতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছে। ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ বাংলাদেশে ডাল পালা ছড়িয়ে বহু দূর চলে গিয়েছে। দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দেশব্যাপী ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করছে ৩০টি কমিউনিটি বেজড্ অরগানাইজেশন। অত্যন্ত আশংকার ব্যাপার হচ্ছে, ট্রান্সজেন্ডার আইন পাস হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ২০২২ সালে ট্রান্সজেন্ডার আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। ২০২৩ এর ২১ সেপ্টেম্বর সে খসড়া আইন উপস্থাপন করা হয়। আইনটি পাস হতে আর মাত্র দুটি ধাপ বাকি। বিকৃত রুচির অধিকারী কিছু মানুষ পশ্চিমা কালচার এদেশে আমদানি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সম্মিলিত প্রতিবাদ ও জনসচেতনতা তৈরি না করলে এদেশে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের মতো জঘন্য ও অশ্লীল কালচার ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। এতে সমকামিতার মতো মস্তবড় গুনাহের প্রসার ঘটবে। ট্রান্সরা সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম না হওয়ায় পরিবার ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। স্বামী স্ত্রীর মহান পবিত্র সম্পর্ক বিলুপ্ত হবে। ব্যক্তিগত, সামাজিক, আন্তর্জাতিক সহ সব ক্ষেত্রে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ।
ট্রান্সজেন্ডারের ফিতনা থেকে বাঁচতে আমাদের করণীয়
ট্রান্স মতবাদের মতো অশ্লীল কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে স্বীকৃতি পেলে শুধু পরকালই নয় বরং আমাদের দুনিয়ার জীবনও হাজারো ক্ষতির শিকার হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ
تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا
অর্থ যখন কোনো জাতির মাঝে প্রকাশ্য অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে তখন সে জাতির মধ্যে প্লেগ ও এমন মহামারি ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না (ইবনে মাজাহ-৪০১৯)।
প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত এই বিষয়ে বিপুল পরিমাণ পড়াশোনা করা।
• নিজে জানা। সাথে সাথে অন্যকেও জানানো।
• লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি বিতরণের মাধ্যমে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সভা-সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ প্রদান করতে হবে।
• শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে।
• বিষয়টির ভয়াবহতা সম্পর্কে পারিবারিক তা'লিমের ব্যাবস্থা করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন ভয়াবহ মানসিক ও চারিত্রিক বিপর্যয় থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
0 Comments